শুধুমাত্র এই চিন্তাটা আপনাকে পরাজিত থেকে বিজয়ী মানুষ বানাবে! [মাস্টারমাইন্ড]

Author:

Published:

Updated:

বিজয়ী মানুষের চিন্তা

সফল মানুষদের ভাবনা:

সফল ও বিজয়ী মানুষের চিন্তা


আমাদের পুরো জীবন ধরে আমরা বিয়োগে অংক কষে যাই। সবকিছুতেই আমাদের বিয়োগ চলে আসে। প্রতিবছর আমরা আয়ুষ্কাল হারিয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সামনের দিকে এগিয়ে যাই ফেলে আসা পথকে বিয়োগ করে। অতীত যেমন আমরা সরাতে পারি না, বিয়োগও না।

মানুষের জীবনে বর্তমানটাই প্রাপ্তি। তাই বর্তমানটাই ঢেলে সাজাতে হয়। আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত বর্তমানকে সাজাতে পারবেন না, যতক্ষণ আপনি বর্তমানকে অনুভব করতে পারবেন। ঘুরে দাঁড়ানোর সময় বর্তমান– কথাটা বহুবার শুনতে শুনতে আমাদের মুখস্থ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু আত্মস্থ হতে পারেনি। যার কারণে পরক্ষণেই আমরা ভুলে যাই। আর ঠিক যখনই ভুলে যাই, তখন আমরা চোখ বুজলেই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ি।

অন্ধকার আমাদেরকে একটা ঘরে আবদ্ধ করে দেয়। আমাদের আত্মচিৎকার কেবল নিজের শরীরের অঙ্গগুলো শুনতে পায়। আর বাকী পৃথিবীকে বধির মনে হয় তখন। আমাদের কান্নাজল সেই ঘরের মেঝে দিয়ে ঘরের বদ্ধ দরজা ভেদ করে বাইরে চলে আসে। কিন্তু মানুষগুলো দেখেও যেন দেখে না। অশ্রুগুলো শুকিয়ে যায়। পৃথিবী তার খোঁজ রাখে না। অশ্রুগুলো মৃত হয়ে যায়। মাটিতে তাদের শেষ ঠিকানা হয়। আর আমরা “ব্যর্থ মানুষ” হিসেবে উপাধি পেয়ে যাই।

সফল হলে চারপাশের মানুষ যেমন আলিঙ্গন করে, তেমনি ব্যর্থ হলে মানুষের চোখে ছানি পড়ে; আপনাকে চিনতে তাদের কষ্ট হয়। তাদের আচরণ দেখে মনে হবে, ব্যর্থতা বুঝি ছোঁয়াচে রোগ। অদ্ভূত না?

হুম… আসলেই অদ্ভুত। আপনার ব্যর্থ হবার কারণটিও অদ্ভূত। আপনি দৌড়ে বেরিয়েছেন কিন্তু রেসে ফিনিশিং লাইনটা ছুতে পারেননি। কিন্তু আপনার ছোঁয়ার কথা ছিলো। হয়ত আপনার পাশে অনেক সীমাবদ্ধতা ছিলো। কিন্তু সীমাবদ্ধতাকে পাশে ফেলে আরেকজন ঠিকই কিন্তু সফল হয়েছে। গাছে উঠতে গেলে বারবার পা পিছলে পড়তে হয়; সাইকেল চালাতে শিখতে হলে বারবার মাটিতে পড়ে যেত হয়। নইলে সাইকেল চালানো কিংবা গাছে উঠা কখনোই সম্ভব হয়ে উঠে না।

টমাস আলভা এডিসন যদি ১০ হাজার বার ফিলামেন্ট তৈরী করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু ১০ হাজারের পর একবার তিনি সফল হয়েছেন। দেখুন তো তিনি কি হাল ছেড়েছেন? নাকি অন্য কাউকে দোষ দিয়েছেন? নাকি বলেছেন নিজের সীমাবদ্ধতার কথা। তিনি তার ব্যর্থতাকে খাটো করে দেখেননি। বরং নিজের চেষ্টাকে বড় করে দেখেছেন।  

বাস্কেট প্লেয়ার মাইকেল জর্ডানের তার ক্যারিয়ারে ৯ হাজার বার বল মিস করেছেন। কিন্তু তিনি বলেন, “আমি বারবার ব্যর্থ হয়েছি এটাই আমার সফলতা”।

অদ্ভুত না? হ্যাঁ, সফলতাটাও অদ্ভুত। যার কারণে সবাই সফল হতে পারে না। তবে প্রতিটা সফলতার পেছনে কাজ করে অদ্ভূত রকমের ব্যর্থতা- যার কথা বলছিলাম। আপনি যখন ব্যর্থ হচ্ছেন আপনি নানান অজুহাতে নিজেকে বিদ্ধ করছেন। কিন্তু অদ্ভূত ব্যর্থতা সেটাই যেখানে আপনার অজুহাত নেই; বরং আপনি ভাববেন আমি পরেরবার সফল হবোই। হ্যাঁ আত্নবিশ্বাসটা জরুরী। কর্মবিশ্বাসটাও জরুরী।

আমার এক বন্ধু পাবলিক পরীক্ষায় ফেইল করার পর, মন্দিরে পুজো দিতে বন্ধ করে দিয়েছিলো। তার ধারণা, সৃষ্টিকর্তা তাকে পাস করায়নি। কি? হাস্যকর মনে হচ্ছে? হাস্যকর মনে হলেও তার বক্তব্য এটা ছিলো। কিন্তু আসল ঘটনা ছিলো কর্মফল।

আসলে আমরা নিজের দোষ, দায় অন্যের উপর চাপাতে চাই। কিন্তু মাশরাফি বিন মর্তুজাকে কয়টা ম্যাচে অন্য দলের উপর দোষ চাপাতে দেখেছেন? প্রতিবারই ব্যর্থতার পরে তার মুখে শোনা যায়, আমরা ভালো খেলতে পারিনি। অর্থ্যাৎ নিজের দায় নিজে নেওয়া। কারণ এতে আপনার নিজের ভেতর সাফল্যের স্পৃহা তৈরী হয়; নিজের দোষগুলো বাছতে সুবিধা হয়; নিজের কাছ থেকে নিজেকে শেখানো যায়।


কারণ –

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর,

সবার আমি ছাত্র,

ছাত্র হয়ে হবে কি আমার,

যদি হই ব্যর্থ।


সেলফ লার্নিং ইজ দ্যা বেস্ট থিংস। নিজে নিজেকে না চালাতে দু-চারটি কথায় আপনার জীবনটা বদলাতে পারবেনা। কিন্তু তাহলে কি বদলাতে পারে আপনার জীবন?

আপনার জীবন বদলাতে পারে, আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আর আপনার অভ্যাস। কোয়ান্টাম মেথোডের খুব পরিচিত একটি স্লোগান আছে– “দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, জীবন বদলে যাবে”। বিশ্বাস করুন আসলেই তাই।

গ্লাসের ফাঁকা অংশের হিসেব না করে ভরা অংশের হিসেব করুন। কারণ মানুষের জীবন বিয়োগেই ভরা। এতে ঘাবড়াবার কিছু নেই। নিজের দোষ নিজের ঘাড়ে নিন। নিজের অ্যাকশন প্ল্যান করুন, যেতে যেতে থেমে যাবেন না। থেমে গেলেন তো হেরে গেলেন, পৃথিবী আপনার নাম অবজ্ঞা করলো।

পৃথিবীকে বলুন, “তুমি আমার নাম মনে রাখো, আমি আসছি তোমাকে জয় করতে”। চারপাশের সবকিছু ভুলে যান। শুধু নিজের সাফল্যকে ধরুন, আলিঙ্গন করুন। ভয় পাবেন না। অন্ধকার সময়ে কেউ সাথে না থাকলেও আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন। কারণ আপনার সেই শক্তি রয়েছে।

কিছুই স্থায়ী নয় পৃথিবীতে। ভাগ্যকে বিশ্বাস করে বসে না থেকে তাকে গড়ে তুলুন একদম নিজের মনের রঙ মিশিয়ে। প্রতিদিন একটু একটু মনে রাখুন আজকে কোথায় কোথায় হেরেছেন, কে আপনাকে ছুড়ে ফেলেছে। শপথ করুন আপনি তাদেরকে আপনার কাজ দ্বারা প্রতিশোধ নেবেন। তারপর শপথ রাখতে পরিশ্রম করে যান। দিন রাত ভুলে যান। সাফল্য আপনারই হবে


কারণ

আপনি অনন্য

আপনি ব্যর্থ

আপনি সফলতা পেতে চান

আপনি শপথ নিয়েছেন

আপনি দৌড়াচ্ছেন

আপনি বর্তমানকে কাজ লাগাচ্ছেন।


এই লেখাটির ভিডিও দেখুন


সবথেকে বড় বিষয় আপনি মানুষ।

কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সফল প্রাণীটি হলো মানুষ।

আর যারা সফল হয় তারাও মানুষ।

প্রতিদিন সকালে বলুন, আমি জিতবো, চোখের সামনে রাখুন ব্যর্থ সময়গুলোতে আপনার দিকে মানুষের আচরণ।

আপনি নগণ্য?

  • না

আপনি সেসবের যোগ্য?

  • না

আপনি ফুরিয়ে গিয়েছেন?

  • না

আপনি শুধু সফল হতে পারেন নি।

এটা আপনার দোষ?

  • কখনোই না। এটা কেবল আপনার একটি দিক। এটা আপনার স্ট্রেন্থ নতুন করে জীবনকে দেখার।

নিজেকে আরেকবার বলুন, “অনেক কাজ বাকী। উঠো, জেগে উঠো, নিজের আলোতে জেগে উঠো। পৃথিবীর চেয়ে আছে, নিজের আত্মা চেয়ে আছে সফল হতে”।

তাহলে সাফল্যের পথে চলা শুরু করছেন কবে?


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Latest posts

  • সর্দি থেকে মুক্তির উপায়, নাকের এলার্জি দূর করার উপায় | দ্রুত উপশম পেতে ঘরোয়া চিকিৎসা

    সর্দি থেকে মুক্তির উপায়, নাকের এলার্জি দূর করার উপায় | দ্রুত উপশম পেতে ঘরোয়া চিকিৎসা

    নাকের এলার্জি হচ্ছে নাকের ঝিল্লি প্রদাহের কারণে নাকের একটি সমস্যা। এটি সারা বিশ্বব্যাপী একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ নাকের এই রোগে আক্রান্ত। নাকের এলার্জি কোন মারাত্মক ক্ষতিকর রোগ না হলেও এ রোগের কারণে দৈনন্দিন জীবন প্রবাহ ব্যাহত হয়। এলার্জিজনিত সর্দি এবং হাঁচি জীবনকে অতিষ্ট করে তোলে। এই রোগে হঠাৎ…

    Read more

  • কফ, কাশি দূর করার উপায় | সঠিক চিকিৎসাই হতে পারে কাশি দূরীকরণের মাধ্যম

    কফ, কাশি দূর করার উপায় | সঠিক চিকিৎসাই হতে পারে কাশি দূরীকরণের মাধ্যম

    গলায় বুকে কফ জমে থাকা বেশ বিরক্তিকর একটি সমস্যা। ঋতু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়। আর আবহাওয়ার এই দ্রুত পরিবর্তন আমাদের শরীর খাপ খাওয়াতে পারে না, যার কারণে সৃষ্টি হয় ঠান্ডা জ্বর ও সর্দি-কাশির। ঠান্ডা সর্দি কাশি এগুলো আমাদের কাছে খুব পরিচিত রোগ হলেও এই ঠান্ডা সর্দি কাশি থেকে আমাদের দেহে অনেক বড় বড় অসুখ…

    Read more

  • ওজন কমানোর উপায় ডায়েট চার্ট | সুস্থ স্বাভাবিক জীবন

    ওজন কমানোর উপায় ডায়েট চার্ট | সুস্থ স্বাভাবিক জীবন

    সুস্থ স্বাভাবিক এবং রোগমুক্ত জীবন আমরা কে না চাই। আর এই সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করার একমাত্র উপায় হচ্ছে শারীরিক ওজন ঠিক রাখা। কেননা ওজন বেড়ে গেলে যে কোন রোগের ঝুঁকি ও বেড়ে যায়। এজন্য বাড়তি ওজন অনেকের মানসিক অসুস্থির প্রধান কারণ। তাই রোগ প্রকোপ কমাতে এবং মানসিক শান্তির উদ্দেশ্যে আমাদের সকলের উচিত শারীরিক ওজন…

    Read more