জ্বলে উঠুন নক্ষত্র হয়ে- শুভ জন্মদিন প্রিয় আরিফিন শুভ!

আরিফিন শুভ

আরিফিন শুভ:

বাংলা চলচ্চিত্রের স্টাইলিশ হিরো: আরিফিন শুভ


কোথা থেকে এবং কীভাবে এলেন আরিফিন শুভ?

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার অঙ্গারগাঁও গ্রামে ১৯৮২ সালের আজকের এই দিনে (২ ফেব্রুয়ারি) রক্ষণশীল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ছেলেটি। দুই ভাই। বাবা ছিলেন সরকরি চাকরিজীবী। মা গৃহিণী।

ছোটবেলা থেকে তাকে শেখানো হতো ‘তুমি এক টাকা নয়, একশো পয়সা খরচ করেছো। তোমার কোনো অভাব নেই, কিন্তু তোমার ‘লাক্সারি’ জীবন যাপন করার সুযোগও নেই।

ছেলেটি হঠাৎ করে একদিন সিদ্ধান্ত নেয় সে মিডিয়ায় কাজ করবে। কিন্তু পরিবার থেকে কখনো চাইতো না ছেলে মিডিয়ায় কাজ করুক। তাই পরিবারের অমতে মাত্র ২৫৭ টাকা সাথে নিয়ে পালিয়ে আসেন ঢাকাতে। এখানে এসে উঠেন দুই বন্ধু ইমতিয়াজ ও আসিফের কাছে।

ছেলেটির নষ্ট হয়ে যাবার যথেষ্ট সুযোগ এসেছিল কিন্তু সেদিকে ভুলেও পা বাড়ায়নি তিনি। অনেকবার ব্যর্থ হয়েছিলেন কিন্তু সেখানে থেকে নিজেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যেের দিকে ছুটেছেন।

এতক্ষণ যে ছেলেটিকে নিয়ে বলছিলাম, বলুন তো তিনি কে? ওপস.. টাইটেল বা থাম্বনিল দেখেই তো লেখা পড়তে ক্লিক করেছেন! তাহলে আবার বোকার মতো প্রশ্ন করি কেন? 

তিনি আর কেউ নন, সবারই পরিচিত মুখ। এই সময়ের বাংলা চলচ্চিত্রের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং স্টাইলিশ হিরো আরিফিন শুভ

আরিফিন শুভর সংগ্রামের জীবন

ঢাকায় এসে প্রথমে কাজ শুরু করেন বিটিভির র‍্যাম্প মডেল হিসেবে। সে সময় তাঁর পকেটে টাকা না থাকায় প্রশিক্ষণ নিতে পারেননি। নীলক্ষেতে গিয়ে পুরোনো ম্যাগাজিনের পাতা উল্টে নামকরা সব মডেলদের ছবি দেখতেন। এরপর বাসায় গিয়ে নিজে নিজে চেষ্টা করতেন। এভাবে হয়ে গেলেন র‍্যাম্প মডেল।

তারপর একসময় র‍্যাম্প থেকে চলে এলেন রেডিও স্টেশনে। রেডিও ফূর্তিতে শুভর শো নামে একটি শোতে আরজে ছিলেন। আরজে হিসেবে বেশ লম্বা সময় কাজ করেছিলেন।

২০০৭ সালে পথচলা শুরু হয় ছোট পর্দায়। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালনায় “হ্যাঁ না” নাটক দিয়ে শুরু হয় এই সম্ভাবনাময় নায়কের পথ চলা। এরপর এক এক করে ৬০ টিরও বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন।

নায়ক আরিফিন শুভর জন্ম ও জয় করা

এরপর চলচ্চিত্রে পথচলা শুরু। তার চলচ্চিত্র যাত্রাটা মোটেও সুখকর ছিল না। সে সময় দুইটি চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রজেক্ট দুইটি আর হয়ে ওঠেনি। অবশেষে খিজির হায়াত খান পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র “জাগো” সিনেমার ছোট একটি চরিত্র দিয়ে তার বড় পর্দায় আবির্ভাব হয়। ছবিটি মুক্তি পায় ১৫ জানুয়ারি, ২০১০ সালে। এরপরেই চুক্তিবদ্ধ হলেন মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ছায়াছবিতে। এই মুভির সবগুলো গানই ছিল শ্রুতিমধুর। সে সময় এই সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে অনেক প্রত্যাশা জেগেছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত আর এই সিনেমাটিও আর আলোর মুখ দেখেনি।

দ্বিতীয় চলচ্চিত্র পূর্নদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী ১৬ অক্টোবর ২০১৩ তে মুক্তি পায়। সেখানে তিনি এন্টি হিরোর রোল প্লে করেছিলেন। এ সিনেমার আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো শিরোনামের গানটি দর্শক মহলে পেয়েছিল ব্যাপক জনপ্রিয়তা। আর এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি জয় করেছিলেন বায়োস্কোপ বর্ষসেরা অভিনেতা (নেগেটিভ রোল)। মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারের দর্শক জরিপে মনোনয়নও পেয়েছিলেন।

তার তৃতীয় মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র “ভালোবাসা জিন্দাবাদ”। এরপরেই ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় প্রজেক্টটি পেয়ে যান আরিফিন শুভ। জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে নির্মিত হয় ”অগ্নি” শিরোনামের চলচ্চিত্রটি। এটি পরিচালনা করেছিলেন ইফতেখার চৌধুরী। এখানে আবির্ভাব হয়েছিলেন স্টাইলিশ লুকে। তিনি শুধু এ মুভিতে নায়ক হিসেবেই নন, সাথে গায়ক হিসেবেও তার নতুন পরিচয় হয়। আরিফিন শুভ এই সিনেমার “সহে না যাতনা” গানটি গেয়েছেন। মুভিটি সে সময় ব্যবসাসফল হয়ে যায়।

২০১৪ সালে আরিফিন শুভর পঞ্চম চলচ্চিত্র হিসেবে রিলিজ হয় মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত “তাঁরকাটা”। এই মুভিটির জন্য প্রথমবারের মত মেরিল প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার লাভ করেন তিনি।

এরপরে ২০১৪ সালে আশিকুর রহমান পরিচালিত কিস্তিমাত সিনেমায় অভিনয় করেন। এই ছবিটিও ঈদে মুক্তি পেয়েছিল এবং ব্যাবসাসফল হয়েছিল।

২০১৫ সালে মুক্তি পায় আরিফিন শুভর ছুঁয়ে দিলে মন ও ওয়ার্নিং। ছুঁয়ে দিলে মন সিনেমার মধ্যে দিয়ে তিনি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। চলচ্চিত্র সমালোচকদের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হন তিনি। এই সিনেমার জন্য ২০১৫ সালে শুভ “মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার (দর্শক জরিপ)” লাভ করেন। এরপর জায়েদ রেজওয়ানের “মৃত্যুপুরী”তে কাজ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় সিনেমাটি এখনো মুক্তি পায়নি, কেন মুক্তি পাচ্ছে না তাও এখনো অজানা।

২০১৬ সালে তিনটি সিনেমা মুক্তি পায়। মুসাফির, অস্তিত্ব এবং নিয়তি। তিনটি সিনেমাতেই আরিফিন শুভ প্রশংসিত হয়েছিলেন। তারপর ২০১৭ তেও তার তিনটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। প্রেমী ও প্রেমী, ধ্যাততেরিকি এবং ঢাকা এ্যাটাক।

ঢাকা এ্যাটাক করেছিল বাজিমাত। আরিফিন শুভ অভিনীত এই সিনেমাটি ২০১৭ সালের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা ছিল। আরিফিন শুভ ঢাকা এ্যাটাক ছবির জন্য তারকা জরিপে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৭ সেরা চলচ্চিত্র অভিনেতার পুরস্কার জয়লাভ করেন।

২০১৮তে এই অভিনেতার মুক্তি পেয়েছিল ভালো থেকো এবং একটি সিনেমার গল্প চলচ্চিত্র। কিন্তু ছবি দুটি সাধারণ দর্শকদের খুশি করলেও ক্লাস ও ক্রিটিকসদের একটু হতাশই করে। সেখান থেকে আবারো নিজেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের বর্তমান ক্রেজ আরিফিন শুভ।

মুক্তির অপেক্ষায় সিনেমা

এই বছর মানে ২০১৯ সালে মুক্তি অপেক্ষায় আছে আরিফিন শুভর আহা রে, জ্যাম এবং মিশন এক্সট্রিম। আহারে সিনেমার মধ্যে দিয়ে কলকাতার টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম বারের মত তার পথচলা শুরু।

আজ এ প্রিয় মানুষটির জন্মদিন। শুভ জন্মদিন আরিফিন শুভ। জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। শুভ হোক আপনার আগামীর পথচলা।

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top