সাকিব আল হাসান এশিয়া কাপের জন্য কতটা ফিট?

সাকিব আল হাসানের ইনজুরি, বাংলাদেশ ক্রিকেট, এশিয়া কাপ ২০১৮, সাকিব আল হাসান,

সাকিব আল হাসান। যারা বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে ন্যূনতম খোঁজখবর রাখেন, তারাও বলতে পারবেন এই নাম কতটা প্রভাব বিস্তার করে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০,০০০ রান এবং ৫০০ এর বেশি উইকেট প্রমাণ করে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাকিব কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

রেকর্ডস বাদ দিলাম, সাউথ আফ্রিকা সফরটা দেখুন। বুঝতে পারবেন বাংলাদেশ কতটা অসহায় সাকিবকে ছাড়া। যুগের বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার ছাড়া আসছে এশিয়া কাপ কি আমরা ভাবতে পারি!

‘সৌরভ গাঙ্গুলি ভারতের দলের ভেতর সর্বপ্রথম ‘নো ফেয়ার’ মনোভাব এনেছিল। আমিও চাই দলের ভেতর সেটা নিয়ে আসতে।’– সাকিব আল হাসান

সবদিক দিয়ে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের অন্যতম মর্যাদাবাহী টুর্নামেন্টগুলোর একটি। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সও বেশ আশা-জাগানিয়া। ২০১২ সালের ফাইনালে হার বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম ট্র্যাজেডি বলা যায়।

সে বছরে সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিমের নির্ভীক খেলা বিশ্বের সামনে নতুন এক বাংলাদেশেকে উন্মোচিত করেছিলো। ২৩৭ রান এবং ৬ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন সাকিব। ফাইনালে হার না-মানা সেই ৬৮ রানের ইনিংস তো এখনো চোখে ভাসে।

২০১৬ সালের এশিয়া কাপে ততটা আশানুরূপ ব্যাটিং পারফরম্যান্স না দেখাতে পারলেও ৫ উইকেট নিয়ে অবদান রেখেছিলেন দলের ফাইনালে উঠার পথে। আসলে একজন সাকিব আল হাসানকে আপনি কখনোই রেকর্ড দিয়ে পরিমাপ করতে পারবেন না।

সাকিব যদি একটা ম্যাচ কখনো ব্যক্তিগতভাবে খারাপ খেলেও থাকেন, তবুও তিনি তাঁর নেতৃত্বগুন এবং ম্যাচ পরিস্থিতি বোঝার জন্য দলের অপরিহার্য সদস্য। তাই এমন একজনকে এবারের এশিয়া কাপে যদি না পেতাম তাহলে সেটা দলের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হত।     

সাকিব অনেকদিন ধরেই তাঁর কনিষ্ঠ আঙুলে ইনজুরি বয়ে বেড়াচ্ছেন। গত ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ফিল্ডিং করতে গিয়ে পাওয়া এই ব্যাথা নিয়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলা দুই টেস্টে যেখানে সব খেলোয়াড়রা ব্যর্থ হচ্ছিলেন, সেখানে দুই টেস্টের এক ইনিংসে সাকিবের ফিফটি আছে। ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচে ১৯০ রান এবং বোলিং এ অসাধারন ইকোনমিক সাকিব তাঁর এই অতিমানবীয় পারফরম্যান্স টেনেছেন টি-২০টিতেও।

প্রথম ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে বাকি দুই ম্যাচ বিশ্বজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে জিতে প্রমাণ দিয়েছিলেন তাঁর নেতৃত্ব গুণাবলির। হয়েছেন ম্যান অফ দ্যা সিরিজ। আসলে এরকমভাবে সাকিবের অবদান বলতে গেলে হয়তো দিস্তার পর দিস্তার কাগজ শেষ হয়ে যাবে, তবু সাকিবনামা শেষ করা যাবে না।

তরুণ ক্রিকেটারদের নৈতিক অবক্ষয়। সমস্যাটা কোথায়?

পড়তে ক্লিক করুন

সাকিব আল হাসান বরাবর আমাদের জন্য নিজের সেরাটা দিয়ে আসছেন। হাতে মারাত্মক ইনজুরি থাকা সত্ত্বেও তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে হাতে ইনজেকশন নিয়ে খেলেছেন। তিনি নিজেও চেয়েছিলেন, তাঁর অস্ত্রোপচারটা এশিয়া কাপের আগেই করতে। হয়তো সমস্যা বোধ করছিলেন তাঁর আঙুলে।

সাকিবের এই ইচ্ছায় বাদ সাধলেন বিসিবি প্রধান। বিসিবি প্রধান চাইলেন, সাকিবের ইনজুরির অপারেশনটা যেনো এশিয়া কাপের পরেই হয়। সাকিব যদি সাম্প্রতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর অপারেশনটা করাতেন তাহলে এশিয়া কাপ মিস করতেন। বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে এই চোট সারতে সময় নিত ছয় থেকে আট সপ্তাহ। তাই বিসিবি প্রধানের চাওয়াতে সাকিব এই অপারেশন করাবেন জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগমুহূর্তে।

আপাতদৃষ্টিতে দেখতে গেলে, এই সিদ্ধান্ত সঠিক মনে হবে, কেননা সাকিব ছাড়া এশিয়া কাপ-২০১৮ তে দল পাঠানো বড় ঝুঁকি হতো। তাহলে তো সব ঠিকই আছে। বিসিবি প্রধানের সিদ্ধান্ত ঠিক আছে কি বলেন!

কিন্তু সমস্যা হলো, আমরা যদি ফাইনালও খেলি এশিয়া কাপের তবুও ম্যাচ পাবো ৫টি। সেই পাঁচটি ম্যাচে সাকিব অবশ্যই তাঁর সেরাটা দিবেন। সাকিবের সেরা পেতে গিয়ে আমরা যদি সাকিবকে হারিয়ে ফেলি বিশ্বকাপের আগে, তা কি ঠিক হবে?

ধরুন, সাকিব সবগুলো ম্যাচ খেললেন এবং একটি ম্যাচে ইনজুরি যদি বেড়ে বসে, তবে আপনি কি করবেন? সাকিব বলেছেন গণ্যমাধ্যমে, তিনি এই সিরিজে দেশের জন্যই ব্যাথানাশক সিরিঞ্জ নিয়ে খেলবেন। কিন্তু আমরা যারা একটু জ্ঞান রাখি ওষুধ-পত্র নিয়ে, তাঁরা জানেন ব্যাথানাশক ওষুধের একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যা ধীরে ধীরে ক্ষতি করে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর বাংলাদেশের ফিজিও জানিয়েছিলেন, সাকিবের এই আঙুল আর কখনোও স্বাভাবিক নাও হতে পারে। এমতাবস্থায়, সাকিবকে এশিয়া কাপ এ খেলানো কি আসলেই বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে?  

“প্রধানমন্ত্রী যেদিন আমাকে দেখতে এলেন আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, তা মায়ের মতোই” -সাকিব আল হাসান

কিছুদিন আগে একটি ইংরেজি পত্রিকাকে সাকিব বলেছেন, তিনি ২০-৩০ শতাংশ ফিট ম্যাচের জন্য। পরবর্তীতে এর পরিপ্রেক্ষিতে কোচ বলেন, সাকিব ম্যাচ খেলার জন্য ফিট বলেই তাঁকে দলে নিয়েছিলেন তিনি। মাত্র ৭০-৮০ শতাংশ ফিট থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজে সাকিব এর পারফরম্যান্স দেখেই কোচ এই বিবৃতি দিয়েছেন তা বোঝা যায়।

একদিন আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে বিসিবির জালাল ইউনুস বলেন, সাকিবের এরকম বিবৃতি তাদের জন্য বিব্রতকর ছিল। তবে সাকিব ছয় তারিখে এক বাংলা সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, তিনি ই-মেইল পাঠিয়েছেন বিসিবিকে তাঁর খেলার ব্যাপারে এবং গত বক্তব্যের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন বিসিবির কাছে।

সাকিবকে নিয়ে জল ঘোলা এর আগে কম করেনি বিসিবি। সাকিব এই অবস্থায় খেলবেন নাকি খেলবেন না এই সিদ্ধান্ত সাকিবের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয় কি?  

এশিয়া কাপ আমাদের মতো বাংলাদেশি ক্রীড়া-সমর্থকদের জন্য অনেক বড় একটি প্রতিযোগিতা। কেননা এশিয়া কাপেই আমরা সর্বপ্রথম আমাদের সামর্থ্যের পরিচয় দিতে পেরেছিলাম এবং এশিয়া কাপ আমাদের বেদনাও দিয়েছে সেই সাথে।

দুইটি ফাইনালে হেরে যাওয়া অবশ্যই কোনো দলের জন্য সুখকর না। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই এশিয়া কাপকে পাখির চোখ করেছে বিসিবি। এই দিকটি দিয়ে চিন্তা করতে গেলে দেখা যায়, সাকিবকে খেলানো ঠিক। তবে বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তা করলে দেখা যায়, সাকিবকে খেলানোয় বড় একটা ঝুঁকি থেকেই যায়।  

সাকিব খেলুক, আর কোনো চোট না পাক এটাই আশা করি। তবে খেলতে গিয়ে যদি ইনজুরি আরো মারাত্মক রূপ ধারণ করে এবং এরপরের বাংলাদেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটা মিস করেন, তাহলে এই দায়টা কে নিবে?

জিম্বাবুয়ে সিরিজের সাথে টেস্ট তো মিস করবেনই আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের টেস্টও যদি মিস করেন, এরপর আপনি সাকিবের ঘাটতি কিভাবে মেটাবেন?

সাকিব বিশ্বে একজনই, তাঁর অভাব আপনি দুনিয়ার কোনো খেলোয়াড় দিয়েই মেটাতে পারবেন না। তবে বিসিবি এবং আমরা কি সাকিবকে সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো ব্যবহার করছি না! প্রিয় পাঠক, আপনার কি মনে হয়? কমেন্টে আমরা আপনার মতামত শুনতে চাই।            

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top