সুখী হওয়ার উপায় কী?
সন্তানকে নিয়ে চাওয়াটা কি? এই প্রশ্নের জবাবে বেশিরভাগ মা-বাবাই বলে থাকেন, তারা তাদের সন্তানকে সুখী দেখতে চান। পৃথিবীর শ্বাশত চাওয়া গুলোর মধ্যে এটি একটি। কিন্তু আমরা সবাই জানি সুখ খুঁজে পাওয়া মানুষের জন্যে অনেক কষ্টসাধ্য একটি বিষয়।
কিন্তু কষ্টসাধ্য হলেও অসম্ভব নয়। আপনি যদি আপনার সন্তানকে সুখী থাকার অভ্যাসের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যেতে পারেন এবং নিজেও তার মধ্যে থাকেন তাহলে ধীরে ধীরে সুখ আপনার কাছে ধরা দিতে বাধ্য।
কেননা, তারা ছোট বেলা থেকে সেই সকল অভ্যাসগুলো পুরো জীবন ধরে চালিয়ে যাবে। যার ফলে আপনি এবং আপনার পরিবারের সবাই একটি সুখী পরিবার পাবেন।
আমরা সবাই জানি, শিশুরা ছোটবেলা থেকে যা শিখবে তাই তারা রপ্ত করবে। যেমনঃ আপনি তার সামনে সিগারেট খেলে সেও সিগারেট খাওয়াটাই শিখবে। তারা যদি দেখে আপনি আপনার বাবা-মাকে অবহেলা করছেন তারাও শিখবে বাবা-মার বয়স হলে তাদের অবহেলা করতে।
এটাকে আপনি একটা সাইক্লিক অর্ডার হিসেবেও ধরতে পারেন। আর সুস্থ শিক্ষার জন্যে পরিবারই পারে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখতে। কারণ, পরিবারই হলো শিশুর প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
অন্য অভ্যাসের মত সুখের অভ্যাসটিও এমন। সুখ আমাদের জীবনের জন্যে অতিরিক্ত কিছু নয় যে তা না পেলেও আমাদের চলে যাবে। বরং এটা আমাদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের কাছে সুখের সংজ্ঞাটা সাফল্যের মাপকাঠিতে চলে আসে। কিন্তু আদৌতে সাফল্য আপনাকে সুখ দিতে পারে না।
সঞ্জা লুবোমিরসকি এবং তার গবেষণা ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোরনিয়ার একটা গবেষণায় দেখা যায় যে, সাফল্য সুখ আনতে পারে না কিন্তু সুখ সাফল্য আনতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোরনিয়ার অন্য একটি গবেষণায় জিন এবং জ্যাক ব্লক দেখান সুখী শিশুরা তাদের জীবনের কঠিন সময়গুলো সহজে পার করতে পারেন। লাইফের চ্যালেঞ্জে তারাই সবচেয়ে এগিয়ে থাকেন।
কি ভাবছেন?
আপনার বয়স কুড়ি কিংবা তার বেশি হয়েছে বলে আপনার সুখী হবার দিন শেষ?
তাহলে আরেকটি রিসার্চের কথা বলি।
এটি করেছেন বেথানি কক এবং বারবারা ফেডরিকসন। তারা দেখান সুখ হিউম্যান বডিতে একটা নিউট্রিশনের মত কাজ করে।
তাহলে এখন প্রশ্ন, এডাল্ট বয়সে এসে আমিষ, প্রোটিনের মত পুষ্টিগুণ থেকে কি বিরত থেকেছেন? অবশ্যই না। তাহলে দাঁড়ায় সুখ নিশ্চিতকরণের অভ্যাসগুলো আপনি নিজেও প্র্যাকটিস করতে পারেন।
আর একটা সময় অভ্যাসটাকে স্বভাবে পরিণত করতে পারেন। কারণ মাত্র ২১ দিন প্রয়োজন হয় একটি অভ্যাসকে স্বভাবে পরিণত করতে। তাহলে চলুন সুখী পরিবারের পাঁচটি উপায় জেনে নিই।
০১. কমিটমেন্ট
১৯ শতকের দিকে দর্শনের অন্যতম পথিকৃৎ আলফ্রেড অ্যাডলার প্রকাশ করেন যে, মানুষের ৫টি মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি আরো একটি মৌলিক চাহিদা রয়েছে।
তা হলো– সে যে কারো অধীনে রয়েছে এটা অনুভব করা তার মৌলিক প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, এই চাহিদাটুকু পূরণ হতে পারে পরিবারের ভেতরের শক্ত প্রতিশ্রুতিপূর্ণ সম্পর্ক দ্বারা।
যখন একজন দম্পতি একজন আরেকজনের সুখে-দুঃখে, উত্থান-পতনে পরস্পরের পাশে থাকে তখন সেটা সিকিউরিটি এবং শান্তির একটা সেন্স তৈরী করে দেয় পরিবারের মাঝে। এটা বিশ্বাসকেও দৃঢ় করে দেয়। ফলে তারা মনের মধ্যে একটা কিছু অনুভব করে। বুঝতে পারে, সে আর একা নয়। বিপদে আপদে একজন তার পাশে আছে।
এই জিনিসটা পেলে বাচ্চারাও আনন্দ অনুভব করে। তারা বুঝতে পারে, খারাপ রেজাল্ট করলে অন্তত তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হবে না, সে পরের পরীক্ষাতে ভালো করার সুযোগ পাবে। ফলে তারা নিজেদের সেফ ভাবতে আরম্ভ করে। এতে বাবা-মার সাথে তাদের আত্মিক সম্পর্কও সুদৃঢ় হতে থাকে।
০২. সেলিব্রেশন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলের (YouTube Link) আত্নউন্নয়নের ভিডিওগুলো দেখলে আপনি লক্ষ্য করবেন আমরা বলি, নিজেকে রিচার্জ করতে হলে সেলফ সেলিব্রেশন প্রয়োজন। ফ্যামিলির ক্ষেত্রেও এটা প্রয়োজন।
আমাদের সমস্যা হলো– আমরা সেলিব্রেশন করার জন্যে অকেশনকে বেছে নেই। কিন্তু শুধু অকেশনই কেন আমাদের সেলিব্রেশনের কারণ হতে হবে?
জীবনের ছোট ছোট জয়কেও তো আমরা সেলিব্রেট করতে পারি। যেমন ধরুন, কেউ মাঠে খেলতে গেলো। তার সাপোর্টাররা তাকে উৎসাহিত করছে। এতে করে সে একটা সেফ এন্ড সিকিউরড ফিল করছে। পরের বার মাঠে খেলতে গিয়ে সে কিন্তু তার ঐসব ফ্যানদের অনুপ্রেরণা পেতে চাইবে।
ফলে তার সাফল্যের একটা অংশ হয়ে যাবে তার ফ্যানেরাও। এতে তার কৃতজ্ঞতাবোধ জন্মাবে। ফ্যামিলিতে আমরা যদি এটা করতে পারি তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে বুঝতে পারছেন?
সেলিব্রেট মানে যে খাওয়া দাওয়া কিংবা বড় আয়োজন বিষয়টি এমন নয়। দেখা গেল, উইকএন্ডে আপনি তাদের সাথে স্পেলিং নিয়ে একটি গেম খেলতে পারেন, ক্যারাম খেলতে পারেন, ক্রিকেট খেলতে পারেন।
এখানে সেলিব্রেশনের কারণ কোনটি ধরতে পারছেন? সেটা হলো – একটা দিন আপনি পরিবারের সাথে কাটানোর জন্যে পেয়েছেন। এমন ছোট ছোট বিষয়গুলোকেও নজরে রাখতে হয়।
কিভাবে বুঝবেন কোন মেয়েটি বা ছেলেটি আপনার জন্য পারফেক্ট? জানতে ক্লিক করুন
০৩. কমিউনিকেট
সুখী পরিবার সবার দিকে মনোযোগ দেয়। তাদের এই মনোযোগটা স্মার্টফোন কিংবা ইউটিউবের থেকে মানুষের দিকেই বেশি। তারা প্রতিটা সদস্যের প্রবলেম এবং ডিফিকাল্টিজ নিয়ে কথা বলে। কেউ যখন কোন কথা শেয়ার করে তখন তা মনোযোগ দিয়ে শুনে।
শুধু শুনেই না, বরং কোন সমস্যার যথাযথ চিন্তামূলক সমাধানও দেয়। “কেমন আছো?” এই একটি কথাতেই সারাদিনের জীবনযাপন উঠে আসে। তাই পরিবারের সদস্যদেরকে এটা জিজ্ঞাসা করা যেতেই পারে।
এছাড়াও পরিবারের যেকোন সিদ্ধান্তে সর্বকনিষ্ঠের মতামত নেওয়াটা আরেকটা উপায় হতে পারে। এতে করে পরিবারে সে নিজের গুরুত্ব বুঝতে পারবে। একটা দায়িত্ববোধ কাজ করবে তার মধ্যে। ফলে পারস্পারিক যে বন্ডিং তা আরো সুদৃঢ় হবে।
০৪. কেয়ার
পরিবারের একজন আরেকজনের প্রতি কেয়ারটুকু মনে মনে না রেখে সরাসরি দেখাতে হবে। কারণ এতে পারস্পারিক বোঝা পড়া ভালো হতে থাকবে।
ফলে আমাদের মধ্যে নেগেটিভ যে ইমোশনগুলো আছে তা দূর হয়ে যাবে। বারবারা ফ্রেডরিকসন তার এক গবেষণার বলেছেন, মানুষের জীবনে পজিটিভ আর নেগেটিভ অনুভূতিগুলো যদি কমপক্ষে ৩ঃ১ অনুপাতে ভাগ হয়ে তবেই মানুষ পজিটিভ হয়ে যায়।
একটি ছোট বাক্য যেমনঃ থ্যাংক ইউ কিংবা হাউ আর ইউ হতে পারে আপনার কেয়ার প্রকাশের একটি মাধ্যম। যদিও এটা আপনার কাছে ফরমাল হতে পারে, কিন্তু একটু ফরমাল হতেই হয়।
কারণ তাতে অন্য মানুষটি ভালো কিছু অনূভব করতে পারে, আপনি যে তাকে সম্মান করছেন এটারও বহিঃপ্রকাশ এসব শব্দ।
০৫. কাডল
কাডল অর্থ হলো আলিঙ্গন করা। ফ্যামিলি হ্যাপিনেস নিয়ে আমরা অনেক কথা বললেও এই পয়েন্টটি ছেড়ে যাই। কিন্তু হ্যাপিনেস এর জন্যে থেকে ভালো কিছু হয়ত খুব কমই রয়েছে।
যেমনঃ বাবা-মা যদি সন্তানকে জড়িয়ে ধরেন কিংবা আলিঙ্গন করেন তাহলে বাবা-মা হৃদকম্পনটুকুও সন্তান অনুভব করতে পারেন। এতে করে হৃদয়ে হৃদয়ে যা ছোঁয়াছুঁয়ি হয় তাতে আমাদের মস্তিষ্কের ভেতর ডোপামিনের নিঃসরণ হয়।
আমাদের মত ইসলামিক দেশে এর প্রচলন খুব একটা নেই। তবে ঈদের নামাজ শেষে আমরা কোলাকুলির মাধ্যমে এই অভ্যাসের মধ্যে দিয়ে যাই।
ঈদে বাবা আর সন্তানের কোলাকুলির ফলে যে শান্তি আমরা লাভ করতে পারি তাকে দুনিয়ার অন্য কিছুর সাথে তুলনা করা বোকামিই হবে। কেননা, এতে করে আমাদের সম্পর্কের ডেফিনেশন প্রমাণিত হয়ে যায়।
পরিবারকে সুখী রাখতে কোন অভ্যাসটি স্বভাবে পরিণত করতে আজ থেকেই শুরু করছেন? আমাদের কমেন্টে জানিয়ে দিন। আর পরিবারের অন্য সদস্যের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও এসব বিষয় সম্পর্কে অবহিত করুন।
যারা ভিজ্যুয়াল লার্নার তাঁরা ক্লিক করুন এখানে, পুরোটা ভিডিও আকারে আছে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে